আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ মুজিবের বাড়ি ভাংচুরের খবর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার অনলাইনে ভাষণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুরো দেশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর রাস্তায় বেরিয়ে আসেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। তারা ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ-ভাংচুর এবং ধানমণ্ডি ৫ নম্বরে শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে আগুন দেন।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি বুধবার দিনগত রাতে ‘বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের হাসিনার বাবার বাড়ি ভাঙার চেষ্টা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশি আন্দোলনকারীরা এসকেভেটর নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বাবার বাড়ির সামনে অবস্থান করছে। তারা ভবনটি ধ্বংসের চেষ্টা চালাচ্ছে। হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে তিনি ঘৃণার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন।

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বার্তা সংস্থা এপি আজ বৃহস্পতিবার সকালে ‘ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পারিবারিক বাড়ি ধ্বংস করল বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধরা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তার পারিবারিক বাড়ি ধ্বংস করল হাজারো বিক্ষুব্ধ জনতা। বাড়িটি একসময় দেশটির স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে গণ্য হতো। কিন্তু এখন আন্দোলনকারীরা মনে করছে, বাড়িটি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্বৈরশাসনের প্রতিচ্ছবি। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে সমর্থকদের উদ্দেশে হাসিনার ভাষণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই হামলার সূত্রপাত ঘটে।

বিবিসি

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পারিবারিক বাড়িতে প্রতিবাদকারীদের আগুন’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবাদকারীরা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পারিবারিক বাড়ি এবং তার দলের অন্যান্য সদস্যদের বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ভারত থেকে হাসিনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে অস্থিরতা শুরু হয়। গত বছর ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর শেখ হাসিনা দেশ থেকে বিতাড়িত হন। ৭৭ বছর বয়সী হাসিনা ২০ বছর বাংলাদেশ শাসন করেছেন। তাকে একজন স্বৈরশাসক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি সরকারে থাকাকালে জনসাধারণের বাকস্বাধীনতা হরণে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের শিরোনাম হলো ‘বাংলাদেশের বিতাড়িত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাবার বাড়িতে আগুন দিচ্ছে বিক্ষোভকারীরা’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নেতার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। কারণ তার মেয়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনলাইনে তার সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী লাঠি, হাতুড়ি ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে ঐতিহাসিক ওই বাড়ি ও স্মৃতিস্তম্ভের চারপাশে জড়ো হন। ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য খননযন্ত্র ও এসকেভেটর নিয়ে আসা হয়।

আনন্দবাজার পত্রিকা

ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলছে বৃহস্পতিবার সকালেও। রাতভর ‘অভিযানে’ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে বাড়ির বেশির ভাগ অংশই। এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বাড়িটির সামনের অংশ পুরোটাই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাড়িটির সামনে জড়ো হওয়া কয়েক জন বলেছেন, স্বৈরাচারের কোনও চিহ্ন তাঁরা রাখতে চান না। ভবনের বড় অংশ ভাঙার পর মানুষকে উল্লাস করতেও দেখা গিয়েছে।

আনাদুলু এজেন্সি (এএ)

তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদুলু এজেন্সির প্রতিবেদনের শিরোনাম হলো ‘বাংলাদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ভারত থেকে সরাসরি ভাষণের বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদ’। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ভাষণ দিয়েছেন। এর প্রতিবাদে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালানো হয়, যা জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২ এ জাদুঘরটি শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক স্থাপনা ছিল।

দ্য গার্ডিয়ান

যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানও এ ঘটনায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের খবরের শিরোনাম হলো ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের বাড়ি ও একসময়ের স্বাধীনতার প্রতীক ধ্বংস করল আন্দোলনকারীরা’। এপির বরাতে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

কেবল নিউজ নেটওয়ার্ক (সিএনএন)

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন তাদের ওয়েবসাইটে ‘নির্বাসিত সাবেক নেতা শেখ হাসিনার পরিবারিক বাড়ি ধ্বংস করেছে বাংলাদেশের প্রতিবাদকারীরা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেও। তারা বার্তা সংস্থা এপি থেকে হুবহু প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এনডিটিভি

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনটিভির শিরোনামে বলা হয়, ‘মজিবুর রহমানের ঢাকার বাড়ি ভাংচুর, বাংলাদেশি জনতার আগুন’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইনে লাইভ বক্তৃতার সময় বিক্ষোভকারীরা ঢাকায় তার বাসভবনে ভাংচুর ও আগুন দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায় বাড়ির সামনে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। বাড়িটি স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে পরিচিত ছিল। শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার ঘোষণায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বুলডোজার মিছিল’ আহ্বান করে ছাত্র-জনতা।

এছাড়াও ফার্স্টপোস্ট, নিউজএক্স, ভরতের হিন্দুস্থান টাইমসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবরের এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

দেশ বাংলা নিউজ

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button