
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) গত ১৮ ফেব্রুয়ারী সন্ত্রাসী কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনার প্রেক্ষিতে হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় খানজাহানআলী থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়। বুধবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮ তম জরুরী সিন্ডিকেট সভা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় এঘটনায় জড়িত বহিরাগতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৩ তম সিন্ডিকেট সভায় রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের আদেশটি বহাল রাখা ও শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধেও যে ঘোষণা করা হয়েছিল তা কঠোরভাবে অনুসরণ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে সকল ধরণের রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং এ আইন অমান্যকারীর বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী চাকুরীচ্যুত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, রাজনীতির সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও তদন্ত সাপেক্ষে আজীবন বহিস্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা হোক মর্মে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়া দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ৪সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় এবং উক্ত কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়। এসকল সিদ্ধান্তের আলোকে ১৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জড়িতদের বিরুদ্ধে উক্ত মামলা দায়ের করা হয়। উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের দুটি গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার প্রেক্ষিতে একটি অনাকাঙ্কিত ঘটনা ঘটে।
উক্ত ঘটনা ঘটার পর বেলা ১টা ৩০ মিনিটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে উক্ত ঘটনার বিচারের জন্য ৪টি দাবি পেশ করা হয়। উক্ত দাবির প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ভাইস-চ্যান্সেলর মহোদয় শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের সহযোগিতা ও যে কোন অন্যায়ের বিচার করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। কোনরূপ কাল ক্ষেপন না করে স্থানীয় আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করে ভাইস-চ্যান্সেলর দ্রুত সহযোগিতা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। এছাড়া ছাত্রদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য ভাইস-চ্যান্সেলর সকল ডিন, ইনস্টিটিউট পরিচালক, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, সকল পরিচালক, প্রভোস্টগণদের নিয়ে বিকাল ৩টা৩০ মিনিটে একটি সভা আহবান করেন।
কিন্তু আইনশৃংখলা বাহিনী উপস্থিত হওয়ার আগেই বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরসহ আরও কয়েজন শিক্ষক স্ব-শরীরে সংঘর্ষ স্থানে যান এবং শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিবৃত্তের চেষ্টা করেন। এসময়ে কয়েকজন শিক্ষক, ভাইস-চ্যান্সেলর, বহু শিক্ষার্থীসহ কর্মচারীও আহত হয়ে কুয়েট মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হন। এসময় ভাইস-চ্যান্সেলরের শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটলেও শিক্ষার্থীদের সকল দাবি দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণের আশ্বাস প্রদান করেন।
ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী ও সংশ্লিস্ট সকলকে শান্ত থাকার আহবান জানানো হয়েছে এবং আর যাতে কোন ধরনের বিশৃংঙ্খলার সৃষ্টি না হয় সে জন্য আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ঘটনার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছে।