
গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে রাজবাড়ী মাঠে। সকাল থেকে রাজবাড়ী মাঠে মিছিল নিয়ে আসছে বিভিন্ন এলাকা থেকে। ইতোমধ্যে মাঠের পশ্চিম পাশে মঞ্চ তৈরির পর আশপাশের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র প্রতিনিধিরা মঞ্চে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছেন।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকা এই সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই উত্তপ্ত গাজীপুর। সকাল ১০টার দিকে গাজীপুরের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে। তবে, কেউ তাদের পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছেন।
সকাল ৯টায় জয়দেবপুর রেল গেইটে কথা হয় এক রিকশাচালকের সঙ্গে। তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “শুক্রবার রাতে সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাসায় হামলার পর থেকেই রাতে ভাবছিলাম সকালে রিকশা নিয়ে বের হবো কি-না। কিন্তু পেটের দায়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। যাত্রী না থাকলেও আতঙ্কের মধ্যে আছি, কখন কী শুরু হয়ে যায়।,
রাজবাড়ী সড়কের এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী বলেন, “প্রতিদিন সকালে দোকান খুললেও আজকে একটু দেরিতে দোকান খুলেছি। সকালে শহরের পরিস্থিতি বুঝে তারপর দোকান খুললেও আতঙ্কে সময় পার করছি। কোনো ক্রেতা নেই। একদিন বেচাকেনা না হলে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।”
পথচারী জয়নাল বলেন, “খুব টেনশন নিয়ে সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে। কখন কি হয়ে যায় বুঝা যাচ্ছে না। কোন দিক দিয়ে দৌড়ানো শুরু হয়ে যায়।”
রাজাবড়ী মাঠের মঞ্চে ইতোমধ্যে ছাত্ররা হ্যান্ড মাইক নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা বলছেন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে। অথচ, সাবেক মন্ত্রীর বাড়ীতে হামলার খবর শুনে তারা প্রতিহত করতে গিয়েছিল। উল্টো তাদের ওপর হামলা চালিয়ে মারাত্মক আহত করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের অভিযোগ, শুক্রবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হকের পৈতৃক বাড়ীতে হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা। এ সময় পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন হামলা চালায়। এই ঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ৫ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক ফারুক বলেন, “গুরুতর আহত পাঁচজন হলেন গাজীপুরের সাইনবোর্ডের কামারজুরি এলাকার শুভ শাহরিয়ার (১৬), গাজীপুর গাছা থানার শরিপুর এলাকার ইয়াকুব (২৪), টঙ্গী পূর্ব থানার মধুমিতা রোড এলাকার সৌরভ (২২), গাছা থানার আলহেরা পেট্রোল পাম্প এলাকার কাশেম (১৭) ও জয়দেবপুর মেট্রো থানার জোড়পুকুর এলাকার হাসান (২২)। হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুরের আহ্বায়ক নাবিল ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ছাত্রদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনার যদি কোনো সুষ্ঠু বিচার না করা হয় তাহলে মার্চ টু গাজীপুর কর্মসূচি দেওয়া হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গাজীপুরের নেতাকর্মীরা বলেন, “হামলায় আহত ব্যক্তিদের প্রায় সবাইকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলায় আহতদের দেখতে গতকাল রাত ৩টার দিকে হাসপাতালটিতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।”
গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে আছে। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না হয় সেদিকে খেলায় রাখছি আমরা।
দেশ বাংলা নিউজ