অ্যান্টার্কটিকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চীনা এআই রোবট-কুকুর

রোবটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) জুড়ে দিয়ে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে চীনের রোবটিক্স। ছয় পায়ের চীনা রোবট গাইড কুকুর এখন আরও উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বৈচিত্র্যময় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গৃহস্থালি নজরদারি, বয়স্কদের সেবা এবং চরম পরিবেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজেও আসছে এগুলো। চীনা সংবাদমাধ্যম সিএমজির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে।
সম্প্রতি, গবেষণা দলটি চীনের চোংশান অ্যান্টার্কটিক গবেষণা স্টেশনের চরম প্রতিকূল পরিবেশে রোবট কুকুরগুলোর কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করেছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে বরফ-সহনশীল জুতা, পানি নিরোধক যন্ত্র এবং বিশেষ ব্যাটারি দিয়ে সজ্জিত কুকুরগুলো মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টানা চার ঘণ্টা কাজ করতে সক্ষম। অ্যান্টার্কটিক গবেষণা কেন্দ্রের আশপাশে বিপজ্জনক বরফের ফাটল থাকলে তা শনাক্ত করতে পারে কুকুরগুলো এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করতেও এদের জুড়ি নেই।
কুকুরের মতো দেখতে এ রোবট চলতে ফিরতে কোনও অংশ আসল কুকুরের চেয়ে কম নয়। পার্থক্য হলো, এটি কখনও ক্লান্ত হবে না। কাজ করতে পারবে মানুষের তৈরি প্রোগ্রাম অনুযায়ী। জরুরি অবস্থায় একে ব্যবহার করা যাবে নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ধরনের সংশয় ছাড়াই।
সাংহাই চিয়াও থং ইউনিভার্সিটির গবেষক এবং লেনোভো গ্রুপ যৌথভাবে তৈরি করেছে রোবট কুকুরগুলো। হাঁটাচলা ও নড়াচড়ায় যথেষ্ট স্থিতিশীল রোবতগুলো দুর্দান্ত গতিতে ছুটতে পারে। এছাড়া, এগুলো অনেক ভারবহনেও সক্ষম। রোবটের বাহু ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি যুক্ত করে এগুলো বিভিন্ন পরিবেশেও নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।
রোবট কুকুরগুলো বিদ্যুৎ স্থাপনা পরিদর্শনেও ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রচলিত বেল্ট বা ট্র্যাকযুক্ত রোবটের তুলনায় এগুলো জটিল ভূখণ্ড সহজেই অতিক্রম করতে পারে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি ও ত্রুটি শনাক্ত করতে পারে।
বয়স্কদের সঙ্গ ও নিরাপত্তা দিতে রোবট কুকুর ব্যবহারের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। এগুলো অসমান রাস্তা সম্পর্কে সতর্ক করা, পথ হারালে দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যোগাযোগে সহায়তা করতে পারে।
ছয়-পা বিশিষ্ট রোবট কুকুরটি সম্প্রতি চোংশান স্টেশন সংলগ্ন বরফের এলাকায় একাধিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। বরফ ও তুষারের ওপর বাধাহীনভাবে হাঁটতে পারে এটি। পিছলে যায় না একটুও। এর জন্য এর পরনে আছে বিশেষভাবে ডিজাইন করা জুতো।
লেনোভো রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাংহাই শাখার প্রধান মাও সিচিয়ে বলেছেন, এই জুতোর উপাদান মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। এ ছাড়া, যখন এগুলো বরফের পৃষ্ঠে পড়ে, তখন চাপটি খুব কম হয়। এতে রোবটটি পিছলে যায় না। কুকুরটিও মসৃণভাবে হেঁটে যেতে পারে।
রোবট কুকুরটির ব্যাটারি সিস্টেমেও এমন সক্ষমতা রয়েছে যে এটি মাইনাস ৩০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে পারে।
এমনকি বরফের ওপরও রোবটটি প্রায় ৭০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত ভার বহন করতে পারে। তবে এর ব্যবহার শুধু মালামাল পরিবহনেই সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন অভিযানের প্রয়োজন মেটাতে এটিকে উন্নত করার পরিকল্পনাও রয়েছে গবেষকদের। আবার অ্যান্টার্কটিকায় জিপিএস ঠিকঠাক কাজ করে না বলে নেভিগেশনের জন্য জাইরোস্কোপ এবং বিভিন্ন সেন্সরের কার্যকারিতা বাড়াতেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা।
গবেষণা দল রোবট কুকুরটিকে আরও জটিল সব কাজের উপযোগী করার চেষ্টা করছেন। অদূর ভবিষ্যতে রোবট কুকুরটিকে অ্যান্টার্কটিকার একাধিক পয়েন্টে পানির নিচে থাকা নমুনা সংগ্রহও করতে দেখা যাবে।